আকবর ও জাহাঙ্গীর সময়কাল থেকে প্রশ্ন- উত্তর - Fresh Gk Bangla

Breaking

Wednesday, August 31, 2022

আকবর ও জাহাঙ্গীর সময়কাল থেকে প্রশ্ন- উত্তর

 আকবর ও জাহাঙ্গীর সময়কাল থেকে প্রশ্ন- উত্তর:



১.  দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে এবং কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়? এই যুদ্ধে কে জয়লাভ করেন ?

উঃ ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল আকবর ও আফগান নেতা আদিল শাহর প্রাক্তন হিন্দু সেনাপতি ও তৎকালীন দিল্লির স্বাধীন শাসক হিমুর মধ্যে। এই যুদ্ধে আকবর জয়লাভ করেছিলেন।


২.  বৈরাম খাঁ কে?

উঃ বৈরাম খাঁ ছিলেন হুমায়ুন কর্তৃক নিযুক্ত আকবরের অভিভাবক যিনি হুমায়ুনের মৃত্যুর পর আকবরকে মুঘল সম্রাট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রসর হয়েছিলেন। মূলত বৈরাম খাঁর নেতৃত্বের ফলেই আকবর পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। পরবর্তী চার বছর তার অভিভাবকত্বেই আকবর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। সাবালক হবার পর আকবর তাকে এই পদ থেকে সরিয়ে (১৫৬০ খ্রিস্টাব্দ) দিলে তিনি বিদ্রোহ করেন কিন্তু পরাজিত হন। আকবর তাকে মক্কা প্রেরণ করলে পথিমধ্যে তিনি নিহত হন (১৫৬১ খ্রিস্টাব্দ)। 


৩. আকবরের রাজত্বকালের কোন সময়কালকে অন্তঃপুরিকার শাসনকাল' বলা হয়?এই শাসনকালে কে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন?

উঃ- আকবরের রাজত্বকালের ১৫৬০–৬৪ খ্রিস্টাব্দ সময়কালকে অন্তঃপুরিকার শাসনকাল' বলা হয়। আকবরের অন্তঃপুরিকার শাসনকালে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তার ধাত্রীমা মাহম আনাগা।


৪.কোন ঐতিহাসিক আকবরের শাসনকালের ১৫৬০-৬৪ খ্রিস্টাব্দ সময়কালকে ‘অন্তঃপুরিকার শাসনকাল' হিসাবে অভিহিত করেছেন।

উঃ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট এ স্মিথ আকবরের শাসনের ১৫৬০-৬৪ খ্রিস্টাব্দ সময়কালকে 'Period of Petticoat Government' বা 'অন্তঃপুরিকার শাসনকাল' হিসাবে অভিহিত করেছিলেন।


৫. আকবরের রাজত্বকালে ১৫৬০-৬৪ খ্রিস্টাব্দ সময়কালকে কেন 'অন্তঃপুরিকার শাসনকাল' হিসাবে অভিহিত করা হয়? 

উঃ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট এ স্মিথের মতে ১৫৬০-৬৪ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে আকবর মুঘলআকবর ও জাহাঙ্গীর অন্তঃপুরের একটি চক্রের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলেন। তার মতে এই সময়ে রাজমাতা হামিদা বানুকে স্বপক্ষে রেখে আকবরের ধাত্রীমাতা মাহম আনাগা শাসনকার্যে আকবরকে প্রভাবিত করেছিলেন। এই কারণে তিনি ১৫৬০–৬৪ সময়কাল অন্তঃপুরিকার শাসনকাল' হিসাবে অভিহিত করেছেন। তবে ঈশ্বরীপ্রসাদ, শ্রীবাস্তব, পি. আর. ত্রিপাঠী প্রমুখ ঐতিহাসিকেরা মাহমের এই ধরনের কর্তৃত্ব ছিল না বলে মত প্রকাশ করেছেন।


৬.  আকবরের রাজত্বকালে ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

 উঃ- ভারতের মুসলমান শাসনকালে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের যে-তীর্থকর দিতে হতো তা আকবর ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দে রদ করে দিয়েছিলেন বলে এই বছর আকবরের রাজত্বকালে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।


৭. আকবরের রাজত্বকালে ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উঃ- ভারতে মুসলমান শাসনকালে অমুসলমান প্রজাদের জিজিয়া নামক যে-বিশেষ কর দিতে হতো তা আকবর ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে রদ করে দিয়েছিলেন বলে এই বছর আকবরের রাজত্বকালে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।


৮.  আকবর কী জিজিয়া পুনঃপ্রবর্তন করেছিলেন?

উঃ- বদাউনী বলেছেন যে ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে জিজিয়া বাতিল করা হয়। কিন্তু ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে জিজিয়া রদ করার পর এই কর পুনঃপ্রবর্তনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই ঐতিহাসিকদের মতে গোঁড়া উলেমাদের পক্ষ থেকে ১৫৭৫-৭৬ খ্রিস্টাব্দে জিজিয়া প্রচলনের প্রয়াস হওয়ায় আকবর ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে জিজিয়া বাতিলের আর একটি আদেশ প্রচার করেছিলেন।


৯. কোন রাজপুত শাসক প্রথম বিনাযুদ্ধে আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেন?

 উঃ অম্বর বা জয়পুরের রাজা বিহারীমল প্রথম রাজপুত শাসক তিনি বিনাযুদ্ধে আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন (১৫৬২ খ্রিস্টাব্দ)। 


১০. আকবরের প্রথম রাজপুত পত্নীর নাম কী ?

উঃ- আকবরের প্রথম রাজপুত পত্নী অম্বরের রাজা বিহারীমলের কন্যা মানবাঈ।


 ১১. আকবর যখন চিতোর অধিকার করেন তখন মেবারের শাসক কে ছিলেন? 

উঃ আকবর যখন চিতোর অধিকার করেন তখন মেবারের শাসক ছিলেন উদয় সিংহ (১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দ)।


 ১২. কাকে পরাজিত করে আকবর গণ্ডোয়ানা রাজ্য অধিকার করেছিলেন?

 উঃ নাবালক রাজা বীর নারায়ণ ও তার মা রাণী দুর্গাবতীকে পরাজিত করে আকবর গন্ডোয়ানা রাজ্য অধিকার করেছিলেন (১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দ)।



১৩. রাণী দুর্গাবতী কে?

উঃ রানী দুর্গাবতী ছিলেন গন্ডোয়ানা রাজ্যের নাবালক রাজা বীর নারায়ণের মাতা। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনিই রাজ্য শাসন করতেন। ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে আকবরের নির্দেশে মুঘল বাহিনী এই রাজ্য আক্রমণ করলে রানী দুর্গাবতী নিজে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং পুত্রের মৃত্যুর পর আহত হয়ে প্রাণত্যাগ করেছিলেন।


১৪. কাকে পরাস্ত করে আকবর অধিকার করেছিলেন গুজরাট ? 

উঃ শাসক তৃতীয় মুজফ্ফর খানকে পরাস্ত করে আকবর গুজরাট অধিকার করেছিলেন (১৫৭৩ খ্রিস্টাব্দ)। 


১৫. হলদিঘাটের যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে এবং কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল?

উঃ- ১৮ জুন ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হলদিঘাটের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মেবারের রাণা প্রতাপ সিংহের সঙ্গে মান সিংহের নেতৃত্বাধীন আকবরের বাহিনীর।


১৬. আকবর কাকে পরাজিত করে মালব অধিকার করেন ? 

উঃ শাসক রাজবাহাদুরকে পরাজিত করে আকবর মালব অধিকার করেছিলেন (১৫৬১ খ্রিস্টাব্দ)।


১৭. কার নেতৃত্বে আহম্মদনগর আকবরের আক্রমণ প্রতিহত করেছিল ? 

উঃ পূর্বতন রাজার বিধবা কন্যা চাঁদ বিবির নেতৃত্বে আহম্মদনগর আকবরের আক্রমণ প্রতিহত করেছিল।


১৮. চাঁদ বিবি কে?

উঃ চাঁদ বিবি ছিলেন বিজাপুরের বিধবা মহিষী ও আহম্মদনগরের তৃতীয় শাসক আলি আদিল শাহর কন্যা। স্বামীর মৃত্যুর পর চার বছর নাবালক পুত্রের অভিভাবকত্ব করার পর চাঁদ বিবি ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে পিতৃরাজ্যে ফিরে আসেন। ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে আকবরের বাহিনী রাজধানী আহম্মদনগর অবরোধ করলে তার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী এই আক্রমণ প্রতিহত করে। বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য তিনি চাঁদ সুলতানা নামে পরিচিত হন। তার জীবিতকালে আহম্মদনগর মুঘল কর্তৃত্বাধীন হয়নি। ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দে এক সন্ধি দ্বারা পূর্বতন শাসকের নাবালক পৌত্র বাহাদুর শাহকে আকবর আহম্মদনগরের সুলতান বলে স্বীকার করে নিলেও চাঁদ বিবি মুঘল আনুগত্য অস্বীকার করেন। ফলে মুঘল বাহিনী আহম্মদনগর অধিকার করে। অন্যদিকে চাঁদ বিবি আত্মহত্যা করেন।


১৯. দক্ষিণ ভারতের কোন রাজ্য প্রথম আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেছিল?

উঃ দক্ষিণ ভারতের খান্দেশ রাজ্য প্রথম আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেছিল। 


২০. বারো ভূঁইয়া কাদের বলে?

উঃ ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে আকবর বাংলা জয় করলেও ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার বহু স্থানে একাধিক জমিদার স্বাধীনভাবে শাসন চালানোর প্রয়াস করেছিল। এরা বারো ভূঁইয়া বা বারোজন ভূমধ্যকারী নামে অভিহিত হলেও এদের সংখ্যা ছিল আরো বেশি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রীপুরের চাঁদ রায় ও কেদার রায়, যশোহরের প্রতাপাদিত্য, খিজিরপুরের ঈশা খাঁ, তাহেরপুরের কংসনারায়ণ। ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে শেষ স্বাধীন ভূঁইয়ার পতন হয় ।


২১. আকবরের সর্বশেষ যুদ্ধ কোনটি ?

 উঃ ১৬০১ খ্রিস্টাব্দে খান্দেশের অসিরগড় দুর্গ অধিকারের জন্য যে-যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল তা আকবরের সর্বশেষ যুদ্ধ।


২২. আকবরের কোন উজবেগ কর্মচারী প্রথম বিদ্রোহ করেছিলেন? আকবরের কোন পুত্র বিদ্রোহ করেছিলেন ও কবে?


উত্তর- মালবের প্রাদেশিক শাসক আবদুল্লা খান প্রথম উজবেগ কর্মচারী যিনি আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন (১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দ)।

আকবরের পুত্র সেলিম ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন।


২৩  আবুল ফজল কীভাবে মারা গিয়েছিলেন? 

উঃ- আবুল ফজল ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহী সেলিমের অনুচর বীরসিং বুন্দেলা দ্বারা নিহত হয়েছিলেন।


২৪. আকবরের গৃহশিক্ষক কে ছিলেন?

উঃ আকবরের গৃহশিক্ষক ছিলেন উদারপন্থী ধর্মতত্ত্ববিদ আব্দুল লতিফ। 


২৫. জীবনের প্রথমদিকে আকবর কেন প্রতি বছর আজমীর যেতেন?

উঃ জীবনের প্রথম দিকে আকবর প্রতি বছর আজমীর যেতেন সুফী সাধক মৈনুদ্দিন চিস্তীর দরগা দর্শনের জন্য। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান সঞ্চয়ের জন্য তিনি এই দরগাতে আসতেন এবং মুসলমান সাধকদের ধর্মালোচনা শুনতেন।


 ২৬. ইবাদতখানা কী ?


উঃ- ইবাদতখানা ছিল আকবর কর্তৃক ফতেপুর সিক্রিতে নির্মিত একটি বিশেষ সৌধ যা ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে আলোচনার জন্য এই সৌধটি ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৫৭৫-৭৮ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে এখনে কেবলমাত্র ইসলাম ধর্ম ইতিহাস চয়ন সম্পর্কে আলোচনা হতো। ১৫৭৮-৮২ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে হিন্দু, খ্রিস্টান, জৈন, পাশি প্রভৃতি ধর্মের বিশেষজ্ঞতরা ইবাদতখানাতে তাদের ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দ আকবর কর্তৃক দীন-ই-ইলাহী ঘোষণার পর ইবাদতখানার আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।


২৭. ইবাদতখানার ধর্মালোচনায় অংশগ্রহণকারী দুইজন হিন্দু পন্ডিতের নাম করো।

উঃ ইবাদতখানার ধর্মালোচনায় অংশগ্রহণকারী দুইজন হিন্দু পন্ডিত ছিলেন দেবী ও পুরুষোত্তম। 


২৮. ইবাদতখানার অংশগ্রহণকারী দুইজন জৈন সাধকের নাম করো।

উঃ- যে-সমস্ত জৈন সাধক ইবাদতখানায় ধর্মালোচনা করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন হিরাবিজয় সুরি ও বিজয়সেন সুরি।


২৯. আকবর কোন দুই শিখ সাধকের সংস্পর্শে এসেছিলেন?

 উত্তর-  অমরদাস ও রামদাস — এই দুই শিখ সাধকের সংস্পর্শে এসেছিলেন আকবর।


৩০. আকবর কোন দুই জেসুইট পাদ্রীর সঙ্গে ধর্মালোচনা করেছিলেন ?

 উঃ ফাদার রুডলফ অ্যাকুয়াভিভা ও ফাদার মনসারেট নামক দুই জেসুইট বা পর্তুগীজ পাদ্রীর সঙ্গে আকবর ধর্মালোচনা করেছিলেন।


 ৩১. আকবর কোন পার্শি সাধকের সংস্পর্শে এসেছিলেন?

উঃ আকবর পার্শি ধর্মতত্ত্ববিদ দপ্তর মেহেরজী রাণার সংস্পর্শে এসেছিলেন।


৩২. আকবর কোন দুই হিন্দু কুসংস্কার নিবারণের প্রয়াস করেছিলেন ?

 উঃ আকবর হিন্দু সমাজে প্রচলিত সতীদাহ ও বাল্যবিবাহ নিবারণের প্রয়াস করেছিলেন। মহিলার বিনা সম্মতিতে সতীদাহর প্রয়াস আদেশ দ্বারা বন্ধ করা হয়েছিল। অন্যদিকে বিবাহের জন্য পুরুষ ও মহিলার সর্বনিম্ন বয়স নির্দিষ্ট করা হয়েছিল যথাক্রমে ষোলো ও চোদ্দ।


৩৩. মাহজারনামা কী ?

উঃ সেপ্টেম্বর ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে সেখ মুবারক রচিত এবং সুন্নী উলেমা আব্দুল নবি সহ ছয়জন অগ্রণী উলেমা কর্তৃক স্বাক্ষরিত যে ঘোষণাপত্র আকবর প্রচার করেছিল তা মাহজারনামা হিসাবে পরিচিত। এই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, ইসলাম ধর্মের কোনো বিষয়ে উলেমাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে আকবর তার সমাধান করবেন এবং বিতর্কহীন ধর্মীয় ব্যাপারেও তিনি কোরাণের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্দেশ জারী করতে পারবেন। উভয় ক্ষেত্রেই আকবরের বক্তব্যকে চূড়ান্ত হিসাবে এই ঘোষণাপত্র স্বীকৃতি দিয়েছিল। অর্থাৎ এই ঘোষণাপত্র আকবরকে ভারতে কোরাণের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।


৩৪. উলেমাদের ক্ষমতা খর্ব করতে আকবর কী ঘোষণা করেছিলেন ও কবে? 

উঃ উলেমাদের ক্ষমতা খর্ব করতে আকবর ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করেছিলেন 'মাহজারনামা'।


৩৫. দীন-ই-ইলাহী কী ?

উঃ পূর্ব ধারানুসারে দীন-ই-ইলাহী আকবর প্রবর্তিত একটি ধর্মমত। কিন্তু ঐতিহাসিক আর. এস. শর্মা প্রমাণ করেছেন যে আকবর কোনো ধর্মপ্রচার করেননি এবং দীন-ই-ইলাহী শব্দটি তিনি উদ্ভাবন ও ব্যবহার করেননি। এম. আতাহার আলির মতে সর্বাংশে নির্বাচিত একদল মানুষের আধ্যাত্মিক প্রভুর পদ লাভ করতে চেয়েছিলেন আকবর। সুলহ-ই-কুল বা পরিপূর্ণ শান্তি নীতিকে কেন্দ্র করে আকবর তার অনুগামীদের জন্য কিছু আচার ও বিধিনিষেধ তৈরি করেছিলেন। এই পুরো ব্যাপারটিকে দীন-ই-ইলাহী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।


৩৬. দীন-ই-ইলাহী বা আকবরের আধ্যাত্মিক পথ গ্রহণকারী দুইজন ব্যক্তির নাম করো।

 উঃ- দীন-ই-ইলাহী বা আকবরের আধ্যাত্মিক পথ গ্রহণকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজা বীরবল ও আবুল ফজল।


৩৭. কোন ঐতিহাসিক দীন-ই-ইলাহীকে আকবরের অহংবোধের উদাহরণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন?

উঃ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট এ.স্মিথ দীন-ই-ইলাহীকে 'আকবরের অহংবোধের উদাহরণ 'হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।


৩৮. আবুল ফজল দীন-ই-ইলাহীকে কী নামে অভিহিত করেছেন?

উঃ আবুল ফজল দীন-ই-ইলাহীকে অভিহিত করেছেন তৌহিদ-ই-ইলাহী নামে। 


৩৯. সুলহ-ই-কুল কথাটির অর্থ কী?

উঃ- এম. আতাহার আলি অনুসারে সুলহ্-ই-কুল শব্দের অর্থ পরিপূর্ণ শাস্তি হলেও অন্যান্য ঐতিহাসিকদের মতে এই শব্দের অর্থ সব ধর্মের মধ্যে শান্তি।


৪০. টোডরমল কে ছিলেন?


উঃ টোডরমল ছিলেন আকবরের রাজস্বমন্ত্রী। লাহোরের এক সাধারণ পরিবারের এই সন্তান ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে আকবরের দেওয়ান নিযুক্ত হয়েছিলেন। তার প্রধান কৃতিত্ব হল প্রচলিত ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কার প্রণয়ন করে তাকে এক নতুন রূপ দেওয়া। টোডরমল প্রবর্তিত ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ছিল নির্দিষ্ট মানদন্ড দ্বারা কৃষিজমির পরিমাপ, উর্বরতা অনুসারে জমির শ্রেণি বিভাগ, প্রতি শ্রেণির জমিতে বিঘাপ্রতি সমস্ত শস্যের উৎপাদন নির্ণয় এবং সমস্ত শস্যের রাজস্বের অর্থমূল্য নির্ধারণ। টোডরমল সামরিক ক্ষেত্রেও কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা জয় করেছিলেন এবং ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার সুবাদারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আকবর তাকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন।


৪১. বীরবল কে ছিলেন?

উঃ রাজপুত জাতি সম্ভূত বীরবল আকবরের প্রশাসনে উচ্চস্থান এবং রাজা উপাধি লাভ করেছিলেন। তিনি কবি হিসাবেও বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। আকবর তাকে 'কবিপ্রিয়' উপাধি নিয়েছিলেন। ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ইউসুফজাই উপজাতির হাতে তিনি পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন।


৪২. মানসিংহ কে ছিলেন?

উঃ- অম্বরের রাজা বিহারীমলের দত্তকপুত্র মানসিংহ ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে আকবরের প্রশাসনে যুক্ত হয়েছিলেন এবং মৃত্যু অবধি (১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে) নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। সেনাপতি হিসাবে একাধিক যুদ্ধে কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার সাধনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ জয় ছিল হলদিঘাটে প্রতাপ সিংহের বিরুদ্ধে। কাবুল ও বাংলার সুবাদার হিসাবেও মানসিংহ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন।


৪৩. আবুল ফজল কে?

উঃ- সেখ মুবারকের পুত্র আবুল ফজল ছিলেন আকবরের অন্তরঙ্গ সচিব ও সভাসদ। যোদ্ধা, পন্ডিত ও জ্ঞানী লেখক হিসাবে তিনি প্রখ্যাত। আকবেরর উদার রাষ্ট্রনীতি ও ধর্মনীতির ক্ষেত্রে আবুল ফজলের বিশেষ প্রভাব ছিল। আকবরের সাম্রাজ্য সম্পর্কে তিনি দুইটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। আকবরের নির্দেশনামা ও তার সাম্রাজ্যের পরিসংখ্যান নিয়ে তিনি রচনা করেছিলেন ‘আইন-ই-আকবরী' এবং আকবরের সময়ের ভারতের প্রামান্য বিবরণী হিসাবে ‘আকবরনামা' গ্রন্থ। ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে যুবরাজ সেলিমের প্ররোচনায় তিনি নিহত হন ।


 ৪৪. আকবরের তিন পুত্রের নাম কী ? 

উঃ -আকবরের তিন পুত্রের নাম সেলিম, মুরাদ ও দানিয়েল।


৪৫. আকবর পুত্র সেলিমের এরূপ নামকরণের কারণ কী?

উঃ সুফী সাধক সেলিম চিত্তীর দরগায় প্রার্থনার ফলে সেলিমের জন্ম হয়েছে-- এই বিশ্বাস থেকেই আকবর তার নামকরণ করেছিলেন সেলিম।


৪৬. আকবরের সমাধিসৌধ কোথায় নির্মিত হয়েছিল? এর নির্মাণকাজ কে শেষ করেন? 

উঃ আকবরের সমাধিসৌধ সেকেন্দ্রাতে নির্মিত হয়েছিল।এই সৌধের কাজ শেষ করেছিলেন জাহাঙ্গীর।


৪৭. আকবরপুত্র সেলিম কী কী উপাধি গ্রহণ করেছিল?

উঃ- ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে অভিষেককালে আকবরপুত্র সেলিম গ্রহণ করেছিলেন 'জাহাঙ্গীর'(পৃথিবীর মালিক) এবং 'নূরউদ্দিন' (সত্যের আলো) উপাধি। 


৪৮. জাহাঙ্গীরের রাজসভায় প্রথম কোন ইংরাজ দূত আসেন? ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে কোন ব্রিটিশ দূত জাহাঙ্গীরের রাজসভায় এসেছিলেন?

উঃ জাহাঙ্গীরের রাজসভায় প্রথম ইংরেজ দূত হিসাবে আসেন ক্যাপ্টেন হবিন্দ ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে। - ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ দূত হিসাবে জাহাঙ্গীরের রাজসভায় এসেছিলেন স্যার টমাস রো।


৪৯. মেবারের কোন রাণা জাহাঙ্গীরের বশ্যতা স্বীকার করেন?

উঃ ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে মেবারের রাণা অমর সিংহ জাহাঙ্গীরের বশ্যতা স্বীকার করেন।


 ৫০. জাহাঙ্গীর কোন শিখ গুরুকে হত্যা করেন এবং কোন শিখ গুরুকে বারো বছর বন্দীকরার নির্দেশ দিয়েছিলেন?

উঃ- জাহাঙ্গীর ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে শিখ গুরু অর্জুনকে হত্যা করেন।জাহাঙ্গীর শিখ গুরু হরগোবিন্দকে গোয়ালিয়র দুর্গে বারো বছর বন্দী করে রাখার আদেশ নিয়েছিলেন।


৫১. উত্তর-পশ্চিমের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটী জাহাঙ্গীর পারসিকদের কাছে হারিয়েছিলেন ও কত খ্রিস্টাব্দে?

উঃ - জাহাঙ্গীর ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের শাসক শাহ আব্বাসের কাছে উত্তর-পশ্চিমের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটা কান্দাহার হারিয়েছিলেন।


 ৫২. নূরজাহান চক্র কী ? 

উঃ প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষীগত করার জন্য নিজ বাবা, ভাই ও জাহাঙ্গীরের পুত্র খুররমকে নিয়ে জাহাঙ্গীরের প্রধানা মহিধী নূরজাহান যে-চক্র গড়ে তুলেছিলেন তাকে নুরজাহান চক্র বলা হয় ।



৫৩.'পাদশাহ বেগম' নামে কে ও কেন পরিচিত ছিলেন?

উঃ ‘পাদশাহ বেগম' নামে পরিচিত ছিলেন নূরজাহান। সাম্রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে নূরজাহানের সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাকে ‘পাদশাহ বেগম বলা হতো।


৫৪. নূরজাহানের প্রকৃত নাম কী ছিল?

উঃ- নূরজাহানের প্রকৃত নাম ছিল মেহেরউন্নিসা।


 ৫৫. জাহাঙ্গীরের চার পুত্রের নাম কী?

উঃ- জাহাঙ্গীরের চার পুত্রের নাম ছিল যথাক্রমে শাহরিয়ার, খসরু, খুররম ও পারভেজ।


৫৬. জাহাঙ্গীর প্রথম কোন পুত্রের বিদ্রোহের সম্মুখীন হন?

উঃ- জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে প্রথম তার বড়পুত্র খসরু বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে।


৫৭. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শাহজাহান কত খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন?

উঃ- জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শাহজাহান বিদ্রোহ করেন ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে।


৫৮. কে জাহাঙ্গীরকে বন্দী করেছিলেন?

উঃ- ১৬২৬ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরকে বন্দী করেন বিদ্রোহী অভিজাত মহাবৎ খাঁ। প্রঃ 'নাসুদানি' কাকে বলা হতো? উঃ জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহরিয়ারকে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে 'নাসুদানি' (নিষ্কর্মা) বলা হতো।


৫৯. শের আফগান কে?

উঃ- জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে আলি কুলি বেগ নামক এক পারসিক কর্মচারী পরিচিত ছিল শের আফগান নামে। সম্ভবত তিনি খালি হাতে বাঘ শিকার করে এই উপাধি লাভ করেছিলেন। জাহাঙ্গীর কর্তৃক তিনি বর্ধমানের জায়গীরদার নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের আফগান বিদ্রোহের সময়ে শের আফগানের ভূমিকা সন্দেহজনক বিবেচিত হওয়ায় জাহাঙ্গীর তাকে আটক করার প্রয়াস করলে সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে তার বিধবা স্ত্রী মেহেরউন্নিসাকে জাহাঙ্গীর বিবাহ করেন।


৬০. মালিক অম্বর কে ছিলেন?

উঃ- মালিক অম্বর ছিলেন এক আবিসেনীয় ক্রীতদাস যিনি পরবর্তীকালে আহম্মদনগরের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দীর্ঘকাল কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশাসন পরিচালনা করেছিলেন। তিনি প্রশাসন ব্যবস্থাকে কর্মক্ষম করে তোলার সঙ্গে সঙ্গে একটি নতুন রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। এই রাজস্ব ব্যবস্থাতে উর্বরতা অনুসারে কৃষি জমিকে চারভাগে বিভক্ত করে অর্থের আকবর ও জাহাঙ্গীর মাধ্যমে দেয় স্থায়ী ভাবে রাজস্বের হার নির্ধারণ এবং এই কর কর্মচারী দ্বারা সরাসরি গ্রাম প্রধানের কাছ থেকে আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অন্যদিকে তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং সামগ্রিক কৃতিত্বের কারণে জাহাঙ্গীর কর্তৃক আহম্মদনগর অধিকারের সমস্ত প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছিল। ১৬২৬ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয় এবং তারপরই আহম্মদনগর মুঘল কর্তৃত্বাধীন হয়।


৬১. কোন ঘটনার পর জাহাঙ্গীর খুররমকে শাহজাহান উপাধি দান করেন?

 উঃ খুররমের সামরিক প্রয়াসের ফলে ১৬১৭ খ্রিস্টাব্দে আহম্মদনগরের প্রধানমন্ত্রী মালিক অম্বর মুঘল শক্তির সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন। এই সন্ধি দ্বারা মুঘল শক্তি বালাঘাট অঞ্চল ও আহম্মদনগর দুর্গ লাভ করে। অপরাজেয় মালিক অম্বরের বিরুদ্ধে এই সফলতা লাভ করার জন্য জাহাঙ্গীর খুররমকে শাহজাহান' (জগতের বাদশা) উপাধি দান করেন।


৬২. জাহাঙ্গীরের মা ও এক হিন্দু মহিষীর নাম করো।

 উঃ জাহাঙ্গীরের মা ছিলেন মরিয়াম উস জার্মানি।

জগৎ গোঁসাই বা যোধাবাঈ ছিলেন জাহাঙ্গীরের হিন্দু মহিষী।


No comments:

Post a Comment