প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে ও তার উপাদানসমূহ| বায়ুমণ্ডল, ট্রপোস্ফিয়ার ,স্ট্যাটোস্ফিয়ার,মেসোস্ফিয়ার, ওজোন স্তর ও বিভিন্ন শিলার স্তর|
প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে?
প্রকৃতি নিজে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি জীবের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে উপাদানগুলি তৈরি করেছে, সেই উপাদানগুলির সমষ্টিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ (Physical Environment) বলে।
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলি কী কী?
প্রাকৃতিক পরিবেশের দুটি প্রধান উপাদান আছে। যেমন—
(1) সজীব উপাদান (Living Components) : ইংরেজি ভাষান্তরে একে বায়োটিক কমপোনেন্ট (Biotic Component) বা লিভিং কমপোনেন্ট বলে। যেমন— ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, মাছ, ব্যাং, বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ, শ্যাওলা, গাছপালা ইত্যাদি। এই উপাদানগুলির জীবন আছে তাই এরা সজীব উপাদান। (2) জড় উপাদান (Non-living Components) : ইংরেজিতে জড় উপাদানকে আবায়োটিক কমপোনেন্ট (Abiotic Component) বা “নন-লিভিং কমপোনেন্ট" বলে। যেমন— আলো, জল, বিভিন্ন গ্যাস, মাটি, তাপমাত্রা ইত্যাদি। এই উপাদানগুলির প্রাণ নেই। তাই এরা জড় উপাদান। এরা জীবনধারণে সাহায্য করে।
অভ্যন্তরীণ গঠন অনুসারে পৃথিবীর প্রধান উপাদান বা মণ্ডলগুলি কী কী ?
অভ্যন্তরীণ গঠনের (internal structure) ভিত্তিতে পৃথিবীর চারটি উপাদান বা মণ্ডল। এর মধ্যে তিনটি জড় মণ্ডল, যেমন- ( 1 ) বায়ুমণ্ডল ( atmosphere), (2) শিলামণ্ডল বা অশ্মমণ্ডল (lithosphere), (3) বারিমণ্ডল (hydrosphere) এবং (4) একটি সজীব উপাদান অর্থাৎ জীবমণ্ডল (biosphere)।
পৃথিবীকে ঘিরে থাকা গ্যাসীয় আবরণকে বায়ুমণ্ডল বলে। পৃথিবীর ওপরে শিলা দিয়ে তৈরি কঠিন। স্তরটি শিলামণ্ডল নামে পরিচিত। বারিমণ্ডল হল ভূ-পৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত যাবতীয় জলরাশি অর্থাৎ সাগর, মহাসাগর, নদী, হ্রদ, জলাভূমি প্রভৃতিকে একসঙ্গে বারিমণ্ডল বলে। আর উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতকে একত্রে জীবমণ্ডল বলা হয়।
জীবজগতের সমস্ত প্রয়োজনীয় বস্তু ও মানুষের উপভোগ্য যাবতীয় সম্পদ এই চারটি মণ্ডল' বা ক্ষেত্র থেকে পাওয়া যায়।
■ অ্যানথ্রোপোস্ফিয়ার বা টেকনোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝায়?
মানুষ তার প্রয়োজনে পরিবেশ ও ভূমণ্ডলের যে অংশকে পরিবর্তন করে বা যে অংশে নতুন কিছু নির্মাণ করে বা তৈরি করে তাকে অ্যানথ্রোপোস্ফিয়ার (anthroposphere) বা টেকনোস্ফিয়ার (techno-sphere)বলে। যেমন— খাল, ব্রিজ, শহর, কৃত্রিম দ্বীপ ইত্যাদি। : উপাদান ও স্তর (The Atmosphere : Elements and Layers)
বায়ুমণ্ডল কাকে বলে ?
ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত যে গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে, তাকে বায়ুমণ্ডল (atmosphere) বলে। শিলামণ্ডল ও বারিমণ্ডলের মতো বায়ুমণ্ডল পার্থিব পরিবেশের অবিভাজ্য অংশ। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে এই গ্যাসীয় আবরণ সংযুক্ত হয়ে রয়েছে।
বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি কী কী?
বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ইত্যাদি উপাদানগুলির সমন্বয়ে গঠিত। জীবজগতের পক্ষে দূষিত পদার্থ যেমন, সালফার ডাইঅক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসও বায়ুমণ্ডলের অঙ্গ।
ভূমণ্ডল বা ট্রোপোস্ফিয়ার কী?
ট্রোপোস্ফিয়ার নামের এই বলয়টি ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে 14 কিমি উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। এটি বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর। আকৃতিগতভাবে ক্ষুব্ধমণ্ডল উপবৃত্তাকার। মেরু অঞ্চলে এই উপস্তরটি৪ কিমি এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে 16 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। ক্ষুব্ধমণ্ডল নামটির মধ্যেই বায়ুস্তরের এই বিশেষ বলয়টির বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। এখানে মেঘ, বৃষ্টি, ঝড়, ঘূর্ণবাত (cyclone), প্রতীপঘূর্ণবাত (anticyclone) প্রভৃতি দেখা যায়। গ্রিক শব্দ টোপো (Tropo) কথাটির অর্থ মিশ্রণ বা বিক্ষোভ।
■ ল্যাপ্স রেট কী ?
ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা ও তাপমাত্রার সম্পর্ক বিপরীত, অর্থাৎ এখানে প্রতি কিমি উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে 6-4° সে. তাপমাত্রা হ্রাস পায়। কিংবা বলা যেতে পারে, প্রতি হাজার ফুট উচ্চতায় 3-6° ফা. তাপমাত্রা কমতে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা হ্রাসের এই অনুপাতকে “ল্যাপস রেট”(normal lapse rate) বলে।
■ ট্রোপোস্ফিয়ারের গুরুত্ব কী ?
বায়ুমণ্ডলের অন্যান্য স্তরের তুলনায় ট্রোপোস্ফিয়ারের প্রভাব প্রাণী ও মানব জীবনের ওপর অপরিসীম। ক্ষুদ্রমণ্ডল বা ট্রপোস্ফিয়ার শ্বাস-প্রশ্বাসের সহায়ক গ্যাস সরবরাহ করে। জলচক্রের মাধ্যমে বৃষ্টি দেয়। তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে। বাতশক্তির জোগান দেয়। এখানেই অধিকাংশ বায়ুদূষণ ঘটে।
অ্যালবেডো কী ?
সূর্য থেকে আসা সৌরশক্তির কিছু অংশ মেঘ, ধূলিকণা, বরফে ঢাকা জমি, সাগর-মহাসাগর, মরুভূমি, বনভূমি থেকে বিচ্ছুরিত ও প্রতিফলিত হয়ে আলোক তরঙ্গের আকারে পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে ফিরে যায়। একে অ্যালবেডো (Albedo) বলে। পৃথিবীর অ্যালবেডো 30-35 শতাংশ। গড় অ্যালবেডো 34 শতাংশ। ল্যাটিন অ্যালবেডো শব্দের অর্থ শুভ্রতা (Whiteness)। সৌর বিকিরণের পূর্ণ শোষণ-এর মান শূন্য (0) এবং পূর্ণ প্রতিফলন-এর মান এক (1) হলে, পৃথিবীর অ্যালবেডো 0.30-0.35।
. তাপমাত্রার বৈপরীত্য বলতে কী বোঝায় ?
উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও তাপমাত্রা যখন কমে না, তখন এই বিপরীত অবস্থাকে তাপমাত্রার বৈপরীত্য বা বৈপরীত্য উষ্ণতা (Inversion of temperature) বলে। রাত্রিবেলা পাহাড়ি ঢালে ও দিনের বেলা উপত্যকা অঞ্চলে বৈপরীত্য উষ্ণতা ঘটে।
ক্যাটাবেটিক বায়ু কি?
রাত্রিবেলা তাপ বিকিরণের ফলে পাহাড়ি ঢাল ঠান্ডা হলে পাহাড়ের ওপরের ঢাল থেকে ঠান্ডা ভারী বাতাস নীচের দিকে নামে ও উপত্যকার মধ্যে জমা হয়। উপত্যকামুখী এই শীতল বায়ুকে ক্যাটাবেটিক (Katabatic) বায়ু বলে। ফলে নীচে উপত্যকা ঠান্ডা হয়, আর একটু ওপরের দিকে অপেক্ষাকৃত গরম অবস্থা লক্ষ করা যায়। ক্যাটাবেটিক বায়ু কুয়াশা তৈরি করে।
■ অ্যানাবেটিক বায়ু কি?
দিনের বেলা উপত্যকার বায়ু গরম হয়ে পাহাড়ি ঢাল বরাবর ওপরের দিকে ওঠে। এই ঊর্ধ্বমুখী উষ্ণ বায়ুকে অ্যানাবেটিক (Anabatic) বায়ু বলা হয়। অ্যানাবেটিক বায়ু মেঘ তৈরিতে সাহায্য করে।
শান্তমণ্ডল বা স্ট্যাটোস্ফিয়ার কী?
এটি ট্রোপোস্ফিয়ারের ওপরের স্তর অর্থাৎ এটি বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্তর। স্তস্তর বা টোলোকের উচ্চতম সীমান্ত থেকে শুরু হয়েছে শান্তমণ্ডল বা স্ট্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)। এই স্তরটি মোটামুটি ভালে
17 কিমি থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। শান্তমণ্ডল বা স্ট্যাটোস্ফিয়ার এর বৈশিষ্ট্য ক
স্ট্যাটোস্ফিয়ারের নিম্নতম অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রার কোনো তারতম্য ঘটে না। এই অঞ্চল বায়ুপ্রবাহহীন। ঝড়, বৃষ্টি প্রভৃতি কোনো দুর্যোগ এখানে দেখা যায় না। তাই এই শাস্ত বায়ুমণ্ডলটির মধ্যে দিয়ে জেট বিমান যাতায়াত করে। নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরের এলাকাটি উচ্চ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। আনুমানিক 20 কিমি
উচ্চতার পর থেকেই উচ্চ স্ট্যাটোস্ফিয়ারের শুরু। উচ্চ স্ট্যাটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা
বৃদ্ধি পায় (ট্রোপোপজে মাইনাস [-] 60° সে. থেকে উচ্চ স্ট্যাটোস্ফিয়ারে তাপমান ° সে.)।
স্ট্যাটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়লে তাপমাত্রা বাড়ে কেন ?
ভূপৃষ্ঠের 20 থেকে 35 কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে ওজোন (Ozone) গ্যাসের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।ওজোন অতি বেগুনি রশ্মি (ultra violet absorption) শোষণ করে এবং উষ্ণ হয়। ফলে স্ট্যাটোস্ফিয়ারে যেখানে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব বেশি, সেখানে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ে।
ওজোন স্তর কী?
ভূপৃষ্ঠ থেকে 20-35 কিলোমিটার উচ্চতায় স্ট্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে ওজোন (O) গ্যাসের ঘন স্তরটিকে ওজোন স্তর (Ozone layer) বলে। ওজোন স্তরকে ওজোন শিল্ড ( Ozone Shield)-ও বলা হয়।
মেসোস্ফিয়ার কী ?
মেসোস্ফিয়ার ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর। স্ট্যাটোপজ থেকে মেসোপজ পর্যন্ত এর সীমা।এখানে উচ্চতা বাড়লে তাপমাত্রা কমে। মেসোপজ (Mesopause) হল বায়ুমণ্ডলের শীতলতম অংশ,যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস (-) 143° সে.।
মেসোস্ফেরিক মেঘ ও নকটিলুসেন্ট মেঘ কী ?
মেসোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ সীমায় তাপমাত্রা হল মাইনাস 90° সে.। আলোচ্য স্তরের 75-85 কিলোমিটার উচ্চতায় অতি ক্ষুদ্র বরফ কণা (যার মাপ 1 মাইক্রন বা 1,000 মিলিমিটারের । ভাগ), দ্বারা গঠিত মেসোস্ফেরিক মেঘ (Mesospheric cloud) দেখা যায়। এই মেঘ রাত্রিবেলা সূর্যের প্রতিফলিত আলোয় ঝকমক করে। রাত্রিকালীন উজ্জ্বল এই মেঘ নটিলুসেন্ট মেঘ (Noctilucent cloud) নামে পরিচিত।
থার্মোস্ফিয়ার কী?
বায়ুমণ্ডলে মেসোস্ফিয়ারের ওপরের স্তর হল থার্মোস্ফিয়ার। গ্রিক শব্দ “থার্মোস”-এর অর্থ হল তাপ। থার্মোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়লে তাপমাত্রা বাড়ে এবং প্রায় 2500° সে.-এ পৌঁছোয়। প্রসঙ্গত, “ইনটারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনটি থার্মোশিয়ার স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে 330-435 কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
বিসমমণ্ডল বা হেটারোস্ফিয়ার কী ?
ভূ-পৃষ্ঠের 90-100 কিমি উচ্চতার মধ্যে বিসমমণ্ডল শুরু হয়। এই মণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমা প্রায় 10,000 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। বাতাসের গ্যাসীয় উপাদানগুলির পরিমাণ এখানে সমান নয়। সে কারণে এই বলয়টি বিষমমণ্ডল বা হেটারোস্ফিয়ার।(Heterosphere) নামে পরিচিত।
মহাদেশীয় ভূত্বক কী?
সিয়াল গঠিত ভূত্বককে মহাদেশীয় ভূত্বক (Continental Crist) বলা হয়। মরাদেশের নীচে সিয়ালের বিস্তৃত 30-40 কিমি। প্রানিট জাতীয় আগ্নেয় শিলা, নিস ও সিস্ট জাতীয় রূপান্তরিত শিলা ও বিভিন্ন পাললিক শিলা, যেমন- বেলেপাথর শেল ইত্যাদি মহাদেশীয় ভূত্বক বা সিয়াল-এর প্রধান উপাদান।
মহাসাগরীয় ভূত্বক কী?
ভূত্বকের সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম গঠিত অংশটিকে মহাসাগরীয় ভূত্বক (Oceanic Crust)-ও বলা হয়। মহাসাগরীয় ভূত্বক সমুদ্রের তলদেশ তৈরি করেছে। ব্যাসল্ট (Basalt) জাতীয় ক্ষারীয় আগ্নোশিলা মহাসাগরীয় ভূত্বক বা সিমার প্রধান উপাদান। সিমা-র নিম্নসীমান্তে রয়েছে 'মোহো বিযুক্তি' (Moho discontinuity)।
মোহো বিযুক্তি কী?
ভূত্বক ও গুরুমগুলের মধ্যবর্তী সীমানাকে মোহো বিযুক্তি বলে (Mohorovicic discontinuity)। মহাদেশীয় ভূত্বকের নীচে 35 কিমি এবং মহাসাগরীয় ভূত্বকের নীচে 7 কিমি গভীরতায় মোহো বিযুক্তি অবস্থিত।
গুরুমণ্ডল কী?
শিলামণ্ডলের নীচে অর্থাৎ 35 কিমি গভীরতা থেকে প্রায় 2,900 কিমি গভীর পর্যন্ত গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল বা ব্যারিস্মিয়ার-এর (Mantle/ Barysphere) ব্যাপ্তি। লোহা, কার্বন, সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি পদার্থগুলি এখানে ভূ-অভ্যন্তরের প্রচণ্ড চাপ ও তাপের ফলে তরল অবস্থায় রয়েছে। পৃথিবীর মোট ভরের (mass) 67% শতাংশ গুরুমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত। গুরুমগুলের নিম্নসীমা গুটেনবার্গ বিযুক্তি (Gutenberg discontinuity) দিয়ে চিহ্নিত।
অ্যাসথেনোস্ফিয়ার বলতে কী বোঝায়?
ঊর্ধ্ব গুরুমগুলের সর্বোচ্চ অংশে প্রায় 250 কিমি. বেধযুক্ত একটি নমনীয় পদার্থের পাতলা স্তর আছে। এর নাম অ্যাসথেনোস্ফিয়ার (Asthenosphere) |
কেন্দ্রমণ্ডল কী? কেন্দ্রমণ্ডলের বিশেষত্ব কী?
পৃথিবীর কেন্দ্র ( 6371 কিমি.) থেকে গুটেনবার্গ বিযুক্তি ( 2900 কিমি গভীরতা) পর্যন্ত অঞ্চলটি কেন্দ্রমণ্ডল (Core) বা সেন্ট্রোস্ফিয়ার (Centrosphere) নামে প্রসিদ্ধ। রাসায়নিক পরিভাষায় কেন্দ্রমণ্ডলকে নাইফ (NIFE) বলা হয়। কারণ এখানে নিকেল (Ni) ও লোহা (Fe) [Ni + Fe NIFE ]-র প্রাধান্য রয়েছে। এ ছাড়া, এখানে পারদও ( mercury) পাওয়া যায়।
কেন্দ্রমণ্ডলের উপস্তরগুলি কী কী?
কেন্দ্রমণ্ডলের দুটি ভাগ আছে, যথা – বহিস্থ কেন্দ্রমণ্ডল (Outer Core) এবং অন্তস্থ কেন্দ্রমণ্ডল (Inner Core)। 5100 কিমি. গভীরতায় অবস্থিত বুলেন বিযুক্তি বা লেহম্যান বিযুক্তি (Bullen Discontinuity / Lehmann Discontinuity) বহিস্থ এবং অস্তস্থ কেন্দ্রমণ্ডলকে আলাদা করেছে।
শিলা কী? শিলার প্রকৃতি কী?
বিভিন্ন খনিজ (mineral)-কে ধারণ করে থাকে যে প্রাকৃতিক পদার্থ তাকে শিলা (ইংরেজিতে রক) [Rock] বলে। অধিকাংশ শিলাই কঠিন। তবে নরম শিলাও আছে, যেমন- কানা বা কদম। কাদার মধ্যে কেগুলিন (Kaolin) জাতীয় খনিজ পাওয়া যায়। শিলা আলগা (loose)-ও হতে পারে, যেমন— বালি। বালির মধ্যেও খনিজ পদার্থ আছে যথা— গারনেট, রিউটাইল, থোরিয়াম (মোনাজাইট বালি থেকে থোরিয়াম পাওয়া যায়, যা আণবিক শক্তি উৎপাদনের জ্বালানি)।
শীলা কয় প্রকার ও কী কী?
বৈশিষ্ট্য ও উৎপত্তি (origin) অনুসারে শিলা তিনরাকার, যেমন- আগ্নেয় শিলা (Igneous rock) শাললিক শিলা (Sedimentary rock) ও রূপান্তরিত বা পরিবর্তিত শিলা (Metamorphic rock) |
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান হিসেবে শিলার ভূমিকা কী?
শীলা নির্মাণে নানা অর্থনৈতিক কাজে লাগে। পাহাড়, পর্বত, মালভূমি, সমুদ্রের তলদেশ, মহাদেশ সবই শিলা নিয়ে তৈরি মধ্যে নানা মনি ( mineral) পাওয়া যায়, যা শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগে, যেমন- লোহা, তামা, আলুমিনিয়াম, ইউরেনিয়াম, হিরে, সোনা ইত্যাদি।
পাললিক শিলার গুরুত্ব কী?
শিলা ক্ষয় হয়ে পলিতে পরিণত হয়। পলি সঞ্চিত হয়ে কালক্রমে স্তরীভূত (stratified) পাললিক শিলা। গঠন করে। বেলেপাথর, চুনাপাথর, কালা (Coal), ডলোমাইট প্রভৃতি পাললিক শিলার উদাহরণ। পাললিক শিলায় জীবাশ্ম পাওয়া যায়। পাললিক শিলায় আকরিক লোহা পাওয়া যায়। বেলেপাথর দিয়ে বাড়ি তৈরি করা যায়। কলোকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পাললিক শিলার মধ্যে উদ্ভিদ ও জীবজন্ত্রর দেহাবশেষ রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কয়লা, খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তরিত হয়। কয়লা ও খনিজ তেলকে একত্রে জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফুয়েল (fossil fuel) বলে (জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশে দূষণের সমস্যা সৃষ্টি করে।
জীবাশ্ম বা ফসিল কাকে (fossil) বলে।
সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রস্তরীভূত মৃতদেহকে জীবাশ্ম বা ফসিল (fossil) বলে।
রূপান্তরিত শিলার গুরুত্ব কী?
আগ্নেয় ও পাললিক শিলা প্রচণ্ড চাপ ও তাপের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় যেমন, গ্র্যামিট নামক আগ্নেয়শিলারূপান্তরিত হয়ে নিস (gneiss)-এ পরিণত হয়। বেলেপাথর, এক ধরনের পাললিক শিলা, পরিবর্তিত হয়ে কোয়াজাইট (quartize) গঠন করে। রূপান্তরিত শিলা থেকে প্রচুর খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়।
রূপান্তরিত শিলায় জীবাশ্ম পাওয়া যায় না কেন?
প্রচণ্ড চাপ ও তাপের কারণে শিলা রূপান্তরিত হলে, পাললিক শিলার মধ্যে থাকা জীবাশ্ম সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই রূপান্তরিত শিলায় জীবাশ্ম নেই।
সঞ্চরমান মহাদেশ বা কনটিনেন্টাল ড্রিফ্ট মতবাদের মূল কথাটি কী?
আজ থেকে প্রায় 34-35 কোটি বছর আগে বর্তমান মহাদেশগুলি এখনকার মতো পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিল না। তারা একসঙ্গে গায়ে গায়ে জোড়া লেগে ছিল। সেই পাশাপাশি জুড়ে থাকা বিশাল ও প্রাচীন ভূখণ্ডের নাম হল 'প্যানজিয়া' (Pangea)। আর এই প্যানজিয়াকে ঘিরে থাকা প্রাচীন মহাসাগরটি হল 'প্যানথালাসা' (Panthalasa)। এরপরে ভূত্বকের সচল পাতগুলির প্রভাবে প্যানজিয়া ভেঙে ঢুকরো হতে থাকে। আজ থেকে প্রায় 22 কোটি বছর আগে প্যানজিয়ার উত্তরাংশ ভেঙে তৈরি হয় 'লরেসিয়া' (Lauratia) ও দক্ষিণাংশ ভেঙে 'গণ্ডোয়ানাল্যান্ড' (Gondwanaland) নামে দুটি মহাদেশ। সেগুলিও পরবর্তীকালে আস্তে আস্তে ভেঙে তৈরি হয় আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া প্রভৃতি বর্তমান মহাদেশ।
No comments:
Post a Comment