পরিবেশ কি ? পরিবেশ কই প্রকার ও কি কি? পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানসমূহ। পরিবেশ সম্মন্ধে সন্মুখ ধারণা|| - Fresh Gk Bangla

Breaking

Saturday, February 18, 2023

পরিবেশ কি ? পরিবেশ কই প্রকার ও কি কি? পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানসমূহ। পরিবেশ সম্মন্ধে সন্মুখ ধারণা||

পরিবেশ কি ? পরিবেশ কই প্রকার ও কি কি? পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানসমূহ। পরিবেশ সম্মন্ধে সন্মুখ ধারণা||




প্রকৃতির সমস্ত দান মিলেমিশে একসঙ্গে তৈরি হয়েছে পরিবেশ। পাহাড়, নদী, বন, জঙ্গল, কীট, পতঙ্গ, জল, মাটি, জীবজন্তু, মানুষ সবাইকে নিয়ে পৃথিবীর এই পরিবেশ গড়ে উঠতে সময় লেগেছে প্রায় 500 কোটি বছর। মানুষ এসেছে আজ থেকে প্রায় 20 লক্ষ বছর আগে। কিন্তু মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই সে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত হয়ে পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। তার ফল হয়েছে কিছু ভালো, কিছু মন্দ। এই মন্দ প্রভাবকে কাটিয়ে ওঠার জন্য দরকার সার্বিক সচেতনতা, বিশেষ করে পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতা। পরিবেশকে ভালোবাসলে, আপন করে নিলে, পরিবেশবিদ্যা পাঠ করে পরিবেশ সম্পর্কে সাবধান হলে এই মন্দ প্রভাব কাটিয়ে ওঠা যাবে। 


পরিবেশবিদ্যা বা এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ (Environmental Studies) বলতে বিজ্ঞানের সেই শাখাটিকে বোঝায় যে শাখায় ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ (Physical Environment), জীবজ পরিবেশ (Biotic Environment) এবং সামাজিক পরিবেশের (Social Environment) বৈশিষ্ট্য, পারস্পরিক সম্পর্ক ও প্রভাবের ভিত্তিতে সমগ্র পরিবেশের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, সমস্যা ও তার সমাধানের বিষয়ে পঠন পাঠন করা হয়।


পরিবেশবিদ্যা কী বহুমাত্রিক বা মানটিডাইমেনশনাল বিষয়?

 পরিবেশবিদ্যা তার প্রকৃতি ও বিষয়বস্তু অনুসারে বহুমাত্রিক বা মালটিডাইমেনশনাল (multi- dimensional) বিষয়। কারণ পরিবেশবিদ্যার চর্চা আইন, বিজ্ঞান ও মানবীয় বিষয়গুলি (Humanities) থেকে আহরিত তথ্য, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের ওপর নির্ভরশীল, যেমন—


আইন ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক : 

আইনশাস্ত্র পরিবেশ বিষয়ক আইনগুলি তৈরি করতে ও প্রয়োগ করতে সাহায্য করে। যেমন, (i) ভারতে পরিবেশ (সংরক্ষণ) আইন, 1986 [The En vironment (Protection) Act, 1986], (ii) ল (প্রতিরোধ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ) আইন, 1974 [The Water (Pre-vention and Control of Pollution) Act, 1974] ইত্যাদি।



দর্শন ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক : 

দর্শন শাস্ত্র মানুষকে ব্যক্তি হিসেবে ও সামাজিক জীব হিসেবে সার্থক ভাবে বেঁচে থাকতে শেখায়। পরিবেশের নীতিগুলি দার্শনিক সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন, পরিবেশ বিন্যার প্রত্যক্ষবাদী (Positivism) ধারণা, কল্যাণমুখী (Welfare) ধারণা ইত্যাদি।




অর্থনীতি ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক: 


অর্থনীতি মানুষকে শেখায় কীভাবে সে পরিবেশ থেকে পাওয়া প্রয়োজনীয় সম্পদগুলিকে উৎপাদনের প্রয়োজনে ব্যবহার করে এবং উৎপাদিত দ্রব্যগুলি কীভাে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বণ্টিত হয়। সুতরাং অর্থনীতি পরিবেশে সম্পনভিত্তিক কাজকর্মের বিচার বিশ্লেষণ করে। এছাড়া বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করে। 


 বিজ্ঞান ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক : 


নাগরিক হিসেবে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং পরিবেশ সম্পর্কে দেশ ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানুষের দায়িত্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। গণিত, সংখ্যাতত্ত্ব ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক : পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলি থেকে যে তথ্য । পাওয়া যায়, তার বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা এবং ভবিষ্যতে হ্রাস-বৃদ্ধির হার সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য পর্যালোচনার জ গণিত ও সংখ্যাতত্ত্বের প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন।


রসায়ন ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক : 


পরিবেশের বিভিন্ন অংশে যেমন জল, মাটি, বায়ুতে বিভিন্ন রাসায়নিক ও দুষ কগুলি কী পরিমাণে রয়েছে, ওই রাসায়নিক ও দৃষকগুলি মানুষ, উদ্ভিদ ও প্রাণীদের কীভাবে প্রভাবিত করে ইত্যাদি বিষয়গুলি রসায়নবিদ্যার হাত ধরে আমরা জানতে পারি।


 পদার্থবিদ্যা ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :

 পরিবেশকে জানা, বোঝা ও পরিমাপ করার জন্য যত ধরনের যন্ত্রপাতি আমরা ব্যবহার করি তার ভিত্তিই হল পদার্থবিদ্যা। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন' জ্বালানি ব্যবহার করতে হলে, পরিবেশের উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হলে পদার্থবিদ্যার নীতি ও সূত্রগুলি প্রয়োগ করতে হয়।


জীববিজ্ঞান ও ইকোলজি ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :

 জীববিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে মানুষ  উদ্ভিদ ও প্রাণীদের সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান আহরণ করতে সমর্থ হয়েছে। ফলে পরিবেশ ও জীবের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়ে ইকোলজি নামক বিজ্ঞানটিরও জন্ম হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক একটি উপকূলবর্তী অঞ্চলে শিল্পস্থাপন করলে ওই অঞ্চলের উদ্ভিদ, প্রাণী, জল, মাটির ওপর তার কী প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে জানতে হলে জীববিজ্ঞান ও ইকোলজির প্রয়োগ দরকার হবে।


ভূতত্ত্ব ও ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যার মধ্যে সম্পর্ক :

 পরিবেশবিদ্যার সামগ্রিক ক্ষেত্রে ভূতত্ত্ব ও ভূগোল শাস্ত্রের অবদান আছে। জলাভূমি, ওয়েস্টল্যান্ড (wasteland), মরুভূমি ও মরুভূমিকরণ, দুর্যোগ ও বিপর্যয় ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়ার জন্য ভূতত্ত্ব ও ভূগোলবিদ্যার ব্যবহার জরুরি। এছাড়া ইদানীং কালে উপগ্রহ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের যে ছবি প্রতিনিয়ত নেওয়া হচ্ছে, তা পাঠ করতে হলেও ভূবিজ্ঞানের জ্ঞান আবশ্যক। তাই পরিবেশবিদ্যার বহুমাত্রিক চর্চা পরিবেশের সুস্থায়ী উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।


পরিবেশবিদ্যার আলোচনার পরিধি ও প্রয়োজনীয়তা কী?


পরিবেশবিদ্যার আলোচনার পরিধি বিরাট। পরিবেশবিদ্যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীবজ পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশকে বিচার-বিশ্লেষণ করে। পরিবেশবিদ্যার আলোচনা থেকেই আমরা জানতে পারি পরিবেশের উদ্ভব ও বিবর্তন কীভাবে ঘটেছে, পরিবেশের বর্তমান সমস্যাগুলি কী, দুর্যোগ ও বিপর্যয় মানুষ ও পরিবেশকে কীভাবে বিপর্যস্ত করে।পরিবেশ সম্পর্কে জানার গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশের জ্ঞান মানুষকে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধে সঠিক ধারণা দেয়। বিজ্ঞানসম্মত ও সামাজিকভাবে মানুষকে সচেতন করে তোলে।


পরিবেশ সম্পর্কে পাঠ নিলে মানুষ জানতে পারে পৃথিবী তার একার নয়। এই পাহাড়, নদী, সাগর, মাটি অর্থাৎ যা কিছু প্রকৃতির দান, তার সব কিছুতেই মানুষের যেমন অধিকার, তেমনি গাছপালা, পশু-পাখিরও সমান অধিকার। এই রুব সত্যকে আবার নতুন করে জানার ও উপলব্ধি করার জন্যই পরিবেশের পাঠ একাজ জরুরি। পরিবেশ পাঠের প্রয়োজনীয়তা হল।


(1) পৃথিবীর পরিবেশ কীভাবে তৈরি হয়েছে, তার উপাদান কী, এবং ওই উপাদানগুলি কীভাবেই বা নিজেদের মধ্যে কাজ করে সে সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।



2) এ পৃথিবীকে কেন জীবজগতের একমাত্র বাসভূমি বলা হয় সে ব্যাপারে জানা যায়। (3) পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে ধীরে ধীরে কীভাবে জীবজগতের উদ্ভব হয়েছে, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা তৈরি হয়।


(4) পরিবেশ পাঠের মধ্যে নিয়ে বাস্তুতন্ত্র সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক ধারণা জন্মায় । বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে পুষ্টির ফে শক্তিরা প্রবাহ এবং পুষ্টির জোগান অনুসারে প্রজাতির সংখ্যা সামজস্যপূর্ণ কিনা তা বুঝতে পারা যায় । 

(5) সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ কীভাবে পরিবেশের উপাদানগুলিকে কাজে লাগিতে নিজের আর্থসামাজিক উন্নতি করেছে, সে সম্বন্ধেও অবগত হওয়া যায়।


(6) সামাজিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান, যেমন— কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, মানুষের জন্য খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সুরক্ষা প্রকৃতির ব্যাপারে জানা যায়। (7) পরিবেশ সম্বন্ধে পাঠ নিলে পরিবেশের সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক প্রগতির হার নাম জস্যপূর্ণ কিনা সে সম্বন্ধেও ধারণা জন্মায়। ফলে সুস্থায়ী বা বহতা উন্নয়নের সপক্ষে জনচেতনা।


(৪) প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি কেন সৃষ্টি হয়, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি কী এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের কত ক্ষতি করে, তা বুঝতে পারা যায়।


(9) মানুষ দূষণের মাধ্যমে পরিবেশের কতটা ক্ষতি করে, তার মাত্রা ও নিয়ন্ত্রণের উপায় জানার জন্যও পরিবেশ বিষয়ে পাঠ নেওয়া দরকার। বিভিন্ন রকমের দূষণ, যেমন— বায়ুপূরণ, জলদু, শব্দপু ইত্যাদি দুর্যোগগুলি (hazards) সম্পর্কে পরিবেশ বিদ্যা থেকেই জানা যায়। 

(10) পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য এবং যে মানুষ ও সংগঠন (organisation) পরিবেশের ক্ষতি করে,তার অপরাধের জন্য কী শাস্তি দেওয়া যায়, সেই আইনগত ব্যবস্থাগুলি জানার জন্য পরিবেশ আইন সম্পর্কে পাঠ নিতে হয়। পরিবেশ বিজ্ঞান একাজে সাহায্য করে।


(11) জনস্বাস্থ্যের মান কেমন, কোন্ কোন্ কারণের জন্য জনস্বাস্থ্যের মান হ্রাস পায়, ও জনস্বাস্থ্যের মান উন্নয়ন করার জন্য কী কী বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অবলম্বন করা যায়, সেগুলি জানার জন্য পরিবেশ পাঠের প্রয়োজন আছে।



পরিবেশ ও পরিবেশবিদ্যা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা দরকার কেন? 

পরিবেশ হল মানুষের বর্তমান সভ্যতা ও সংস্কৃতির উৎস, ধারক ও বাহক। অতীতকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের উন্নতির ক্ষেত্রে এমন কোনো উদাহরণ নেই যেটি প্রাকৃতিক, জীবজ ও সামাজিক পরিবেশের সাহায্য বা সহায়তা ছাড়া সম্ভব হয়েছে। তবুও উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ভোগ্যপণ্যের জোগান যত বেড়েছে, ধনী মানুষ ও ধনী দেশ তাদের ক্রমবর্ধমান ধনসম্পদে যত ধনী হয়ে। চলেছে, মানুষের আরও উন্নতির আকাঙ্ক্ষা যত তীব্র হয়েছে মানুষ তত পরিবেশের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উদাসীন হয়েছে। তাই পরিবেশবিদ্যার সাহায্যে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।


. পরিবেশের সুস্থিতির জন্য কোন কোন বিষয়ে সচেতনতা দরকার? 

পরিবেশের সুস্থিতির জন্য যে প্রধান বিষয়গুলির দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার সেগুলি হল—


(1) মানুষের জীবনযাত্রার ধরন আধুনিক হওয়া দরকার, কিন্তু বেহিসেবি নয়। তাই সম্পদের উৎপাদন ও উপভোগের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা আবশ্যক। উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং উপভোক্তার ভোগের ধরন যেন পরিবেশগত কাজকর্মকে ব্যাহত না করে।


(2)উন্নয়নের জন্য পরিবেশকোকি, পরিবেশবার প্রণালী অনুসরণ করা দরকার। যেমন- সৌরশকির ব্যবহার।


(3)ল পরিবেশসহ রুমি, করা ও অন্যান্য সম্পদের মানুষের ক্রমবর্ধমান চাপ কমবে।


(4) প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, পরিবার, জীব ও গাছপালা সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া, কর্তবানিয় হওয়ার প্রয়োজন আছে। এতে হানাহানি, ধর্মবিনাশ কমবে। পরিবেশ অনুকূল হবে।


 মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা কীভাবে বাে জনসাধারণের মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা যেভাবে বাড়ে তা হল-


(I) মিডিয়া অর্থাৎ রেডিয়ো, টেলিভিশন, খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন গুলি প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য দেবে, জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, জনমত গড়ে তুলবে। তবে সেই তথ্য ও বিশ্লেষণ সমস্ত মানুষের কাছে যেন সহজে পৌঁছোয় ও তা যেন নিরপেক্ষ ও বোধগম হয়।


(2) বিভিন্ন NGO, স্কুল, কলেজ ও বেগুলি পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা সভা, বিতর্ক, প্রবন্ধ ও ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা করবে। চলচ্চিত্র ও চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করবে।

 (3) সরকারি নীতি পরিবেশবান্ধব হবে এবং তা কার্যকর হবে।

(4) স্কুল কলেজে পাঠবিষয় হিসেবে পরিবেশবিদ্যার চর্চা হবে।


 1.2 পরিবেশ : ধরন ও উপাদান (Environment Types and Elements)


পরিবেশ কাকে বলে?

উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে পারিপার্শ্বিক, ভৌত, রাসায়নিক ও তার অবস্থার দরকার হয়. তাকে পরিবেশ বলে। পরিবেশ তৈরি হাতে দরকার লাগে জল, বাতাস, মাটি, উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ।


বিজ্ঞানীরা পরিবেশের নানা সংজ্ঞা নিয়েছেন, যেমন -

(1) ইউনাইটেড নেশন্‌স এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (1976)-এ দেওয়া সংজ্ঞা অনুসারে “পরিবেশ বলতে পরস্পর ক্রিয়াশীল উপাদানগুলির মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেই প্রাকৃতিক ও জীবমণ্ডলীয় প্রণালীকে বোঝায় যার মধ্যে মানুষ ও অন্যান্য সজীব উপাদানগুলি বেঁচে থাকে, বসবাস করে।


(2) পরিবেশ বিজ্ঞানী বটকিন এবং কেলার, তাদের “এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স” নামক গ্রন্থে বলেছেন যে জীব, উদ্ভিদ বা প্রাণী তাদের জীবনচক্রের যে-কোনো সময়ে যে সমস্ত জৈব এবং অজৈব কারণগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়, সেই কারণগুলির সমস্তিকে পরিবেশ বলে।" [জের কারণ, যেমন- কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, অজৈব কারণ, যেমন মাটি, বাতাস।


(3) জীবনবিজ্ঞানী ওডাম, তার "ফান্ডামেন্টালস অব ইকোলজি” নামক গ্রন্থে পরিবেশের সংজ্ঞায় বলেছেন যে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার যে উপাদান, কারণ ও লক্ষণগুলি সামগ্রিকভাবে জী তীব সম্প্রদায়ের কাজকর্ম ও উন্নয়নকে প্রভাবিত করে, তাকে পরিবেশ বলে। 6 14) সাই অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে পরিবেশ (Environment) সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, "পরিবেশ হল উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী বিভিন্ন বহিঃস্থ অবস্থার সৃষ্টি।


এখানে বহিছে অবস্থা হল চারপাশের অবস্থা। সুতরাং উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ তার চারপাশের যে অবস্থার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকে সেই জৈব এবং অজৈব কারণের সমাধান হল। পরিবেশ।


(5) আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশ হল সেই সমস্ত প্রাকৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা যা মানুষকে যে-কোনো জায়গায়, যে কোনো সময়ে প্রভাবিত করে। যেমন, জিনিসের দাম বাড়লে মানুষের কষ্ট বাড়ে। যুদ্ধ-বিগ্রহ লাগা হলে লোকের দুঃখ-দুর্দশা বাড়ে। এখানে মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধ-বিগ্রহ হল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহ


পরিবেশ কয় ধরনের ও কী কী? 

পরিবেশ তিন ধরনের। যেমন-


(1) ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ (2) সজীব বা জীবঞ্জ পরিবেশ এবং (3) সামাজিক পরিবেশ। অর্থাৎ জল, বাতাস, মাটি, আলো, গাছপালা, জীবজন্য ইত্যাদি সবকিছুকে নিয়ে হল ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ। সজীব বা জীবজ পরিবেশ বলতে পার্থিব পরিবেশে মানুষসহ সমস্ত জীবের পারস্পরিক সম্পর্ককে বোঝায়। জীবজ পরিবেশের দুটি প্রধান উপাদান হল – উদ্ভিদ ও প্রাণী। এছাড়া, সজীব বা জীবা পরিবেশে আছে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক। সামাজিক পরিবেশ হল মানুষের তৈরি পরিবেশ। মানুষের রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, অর্থনীতি,রাজনীতি, শিক্ষা, মূল্যবোধ ইত্যাদি সবকিছুর সমষ্টি হল সামাজিক পরিবেশ। এই পরিবেশের মূল উপাদান হল সংস্কৃতি বা কালচার (culture)। প্রাকৃতিক ও জীবজ পরিবেশ তৈরি করেছে পৃথিবী নিজে। এরা অতি প্রাচীন পরিবেশ। এই পরিবেশ সবসময় বদলাচ্ছে। নিজেদের নিয়মে বদলে যাচ্ছে। মানুষের হস্তক্ষেপে বদল ঘটছে। আবার, সামাজিক পরিবেশ হল, মানুষের জন্য মানুষের তৈরি পরিবেশ। এই পরিবেশের বয়স প্রাকৃতিক পরিবেশের তুলনায় অনেক কম। মাত্র কয়েক হাজার বছর। পৃথিবীতে মানুষ আসার পরে আস্তে আস্তে এই পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই পরিবেশও সব সময় বদলাচ্ছে এবং দ্রুত বদলাচ্ছে।


পরিবেশের উপাদানগুলি কী কী? 

পরিবেশের উপাদানগুলি দুই ধরনের। যেমন— সজীব উপাদান এবং জড় উপাদান।


সজীব উপাদান (Biotic elements) যেমন— জীবাণু, গাছপালা, জীবজন্তু, মানুষ। জড় উপাদান (Abiotic elements): যেমন- জল, বাতাস, মাটি, আলো, উষ্ণতা, আর্দ্রতা, মহাকর্ষ ইত্যাদি।


সজীব উপাদান বলতে পরিবেশের সেই উপাদানগুলিকে বোঝায় যার জীবন আছে, জন্ম আছে, মৃত্যু আছে। জড় উপাদানের মধ্যে জীবনের কোনো লক্ষণ নেই। পরিবেশের সজীব ও জড় উপাদানগুলি কীভাবে পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ তৈরি  করেছে, তা সংশ্লিষ্ট ছকে দেখানো হল।



পরিবেশের ভূপ্রকৃতিগত উপাদানগুলি কি কি?


পরিবেশের ভূপ্রকৃতিগত উপাদানগুলি হল- উচ্চতা, ভূমিরডাল, ভূমিরূপ নদী, হিমবাহ, মরুভূমি ইত্যাদি।

  পরিবেশের জলবায়ু উপাদানগুলিকি কি?

পরিবেশের জলবায়ুগত উপাদানগুলি হল – সূর্যালোক, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও অধ্যক্ষের (যেমন- তুষারপাত, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি), বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি।


পরিবেশের জীবজ উপাদানগুলো কি কি ?


পরিবেশের জীবন্ত বা জীব উপাদানগুলি হল উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীব। যেমন- ব্যাকটেরিয়া। 

পরিবেশের প্রধান রাসায়নিক উপাদানগুলি কী কি ?

পরিবেশের প্রধান রাসায়নিক উপাদানগুলি হল – অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, কসফরাস, সালাফ ইত্যাদি। এই মৌলিক উপাদানগুলিকে ভিত্তি করে পরিবেশে জীব-রাসায়নিক চক্র আবর্তিত হয়।









No comments:

Post a Comment