আঞ্চলিক শক্তির উত্থান অষ্টম শ্রেনীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর | class 8
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর প্রতিটা প্রশ্নের মান -3
প্রশ্ন । ইংরেজ কোম্পানির সঙ্গে বাংলার নবাব মুরশিদকুলি খানের সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর : ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কোম্পানি মোগল সম্রাট ফারুখশিয়রের নিকট সুবা বাংলায় বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার ফরমান বা অধিকার লাভ করে। কিন্তু মুরশিদকুলি খান ইংরেজদের এই আধিপত্য মেনে নিতে পারেননি।
1) দস্তকের জোরে কোম্পানির বণিকেরা বাংলায় ব্যক্তিগত বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছিল। এর ফলে যেমন ক্ষতি হচ্ছিল বাংলার বণিককুলের; তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল নবাবের অর্থনৈতিক স্বার্থ। কারণ কোম্পানি ও তার বণিকেরা বিনাশুল্কে অর্থাৎ কর ফাঁকি দিয়ে বাংলায় ব্যাবসাবাণিজ্য চালিয়ে যেতে থাকে। সুতরাং, নবাব প্রতি বছর এক বিশাল অঙ্কের কর থেকে বঞ্চিত হতেন।
2) মুরশিদকুলি খান বাংলার স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ইংরেজদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের রাস্তায় যাননি। বরং নিমরাজি হয়েই এই ব্যবস্থা মেনে নেন।
3) এইভাবে বাংলার নবাব মুরশিদকুলি খানের সঙ্গে ইংরেজ কোম্পানির সম্পর্কের অবনতি হয়। যদিও তা যুদ্ধের ময়দান পর্যন্ত পৌঁছোয়নি।
প্রশ্ন 2. জগৎ শেঠ' উপাধিটি প্রথম কে লাভ করেন ? এই উপাধির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। অথবা, জগৎ শেঠের ক্ষমতা কীৰূপ ছিল ?
উত্তর: জগৎ শেঠের উপাধি: ব্যবসায়ী ফতেহচাঁদ মোগল সম্রাটের থেকে জগতের শেঠ বা 'জগৎ শেঠ' উপাধি পান। এই উপাধি বংশানুক্রমিকভাবে চলতে থাকে। এটি একটি নির্দিষ্ট বণিক পরিবারের উপাধি ।
তাৎপর্য:-
১) নিজেদের মুদ্রা তৈরি, মহাজনি ব্যাবসা প্রভৃতি বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিল জগৎ শেঠদের। বাংলায় জগৎ শেঠের হাত ধরে একধরনের ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।
২) মুরশিদাবাদে বাংলার নবাবের দরবারে জগৎ শেঠদের রাজনৈতিক প্রভাব খুব বেশি ছিল। পলাশির যুদ্ধের পর জগৎ শেঠদের সম্মতিতে ব্রিটিশ কোম্পানি মিরজাফরকেই নবাব নির্বাচিত করে।
প্রশ্ন 3. বাংলায় বর্গিহানা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও?
উত্তর: বাংলায় বর্গিহানা: বাংলায় মারাঠা বা বর্গিহানা ছিল নবাব আলিবর্দি খান-এর সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ৪২-১৭৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাঠারা বাংলা ও ওড়িশার ভিন্ন অঞ্চলে লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালিয়েছিল। নবাবের রাজধানী মুরশিদাবাদও বর্গিহানা থেকে বাদ যায়নি।
সন্ধি স্থাপন: এই পরিস্থিতিতে নবাব জানি ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে মারাঠা বা বর্গিদের সঙ্গে সন্ধি করেন। সানির একটি শর্ত ছিল মারাঠারা সুবা-বাংলার পশ্চিম সীমা ওড়িশার জলেশ্বরের কাছে সুবর্ণরেখা নদী ভবিষ্যতে পার হবে না।
ফল/ প্রভাব: বর্গিহানার ফলে বাংলার পশ্চিমের জনের মানুষ পূর্ব বাংলা উত্তর বাংলা এবং কলকাতায় চলে যায় অনেকে ব্রিটিশ বণিকদের কাছে আশ্রয় পেয়েছিল।
4. আঞ্চলিকর শক্তি হিসেবে হায়দরাবাদ রাজ্যের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা করো?
উত্তর:- ক্ষয়িষ্ণু মোগল সাম্রাজ্যের পটভূমিকায় ভারতবর্ষে যতগুলি আঞ্চলিক শক্তির উত্থান ঘটেছিল, সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল হায়দরাবাদ রাজ্য।
• হায়দরাবাদ রাজ্যের উদ্ভব :
(১) মোগল দরবারের একজন প্রভাশালী অভিজাত ছিলেন মির কামার উদ্দন খান সিদ্দিকি । ঔরঙ্গজেবের সময় তিনি ছিলেন বিজাপুরের সুবেদার। তাঁকে চিন কুলিচ খানা উপাধিতে ভূষিত করেন সম্রাট ঔরঙ্গজেব।
সম্রাট বাহাদুর শাহ ১৭১৩, খ্রিস্টাব্দে তাঁকে অযোধ্যার সুবেদার নিয়োগ করেন। ও এরপর মোঘল সম্রাট ফারুকশিয়ার তাঁকে নিজাম উ মূলক উপাধি দিয়ে দাক্ষিণাত্যের সুবেদার করে পাঠান।
রাজ্য প্রতিষ্ঠা: ১৭২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সম্রাট মোহম্মদ শাহ তাঁকে 'আসফ ঝা উপাধি নিয়ে দিল্লীতে তাঁর পদে নিযুক্ত করেন। কিন্তু তিনি নানা কারণে সেই পদ ত্যাগ করে হায়দরাবাদে চলে যান। সেখানে রাজত্ব করছিলেন মুবারিজ খান ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে নিজাম তাকে পরাজিত করেন এবং পরের বছর নিজেকে দাক্ষিণাত্যের সুবেদার ঘোষণা করেন। তখন থেকেই তিনি দিল্লির কর্তৃত্ব অস্বীকার করে হায়দরাবাদে একটি স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে।
প্রশ্ন 5 আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে অযোধ্যার উত্থান সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:- মোগল সম্রাটদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভারতবর্ষে অনেকগুলি স্বাধীন আঞ্চলিক রাজ্য আত্মপ্রকাশ করে। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল অযোধ্যা রাজ্য।
অযোধ্যা রাজ্যের উত্থান:
পটভূমি: মোগল সম্রাট মোহম্মদ শাহের রাজত্বকালে সাদাত খান নামে এক খু য়াশান নিবাসী অযোধ্যার সুবেদার হন। কিন্তু সেখানকার জমিদাররা তাঁর সঙ্গে বিরোধিতা শুরু করেন।
এই অবস্থায় সাধাত খান কঠোর হস্তে তাদের দমন করেন। তখন সম্রাট তাঁকে বুরহান-উল-মুলক' উপাধিতে ভূষিত করেন।
অযোধ্যার উন্নতি: অযোধ্যাকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করে তোলার জন্য তিনি রাজস্ব সংক্রান্ত নানান সংস্কার করেন। তিনি জমিদারদের শোষণের হাত থেকে কৃষকদের মুক্ত করেন। প্রশাসনিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকেই মাপকাঠি করেন।
স্বাধীন অযোধ্যার প্রতিষ্ঠা: ১৭২২ খ্রিস্টাব্দ থেকেই সাদাত খান অযোধ্যায় স্বাধীনভাবে রাজ্যপাট চালাতে শুরু করেন। o খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু অবধি তিনি স্বাধীনভাবেই রাজত্ব করেন। অযোধ্যায় পরবর্তী শাসকরা ছিলেন সফদর জং, সুজা- উ দৌলা প্রমুখ।
6. অযোধ্যায় কীভাবে স্বাধীন নবাবির সূচনা হয় ? অথবা, এ প্রসঙ্গে সাদাত খানের অবদান কী ছিল?
উত্তর: মোগল দরবারে সাদাত খান ছিলেন একজন নামজাদা উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী। তিনি ছিলেন একজনদক্ষ প্রশাসক।
স্বাধীন নবাবি প্রতিষ্ঠা : কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সাদাত খান অযোধ্যায় তাঁর নিজস্ব প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হন। প্রথমেই তিনি নিজের জামাতা সফদর জং-কে অযোধ্যার প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন। দেওয়ানি ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করেন। জায়গিরদারি ব্যবস্থাও নিজের মতো করে গড়ে তোলেন।
সাদাত খানের ভূমিকা: অযোধ্যার স্থানীয় রাজা ও গোষ্ঠীপতিদের বিদ্রোহ মোকাবিলা করার জন্য মোগল সম্রাট তাঁকে অযোধ্যায় পাঠান। শীঘ্রই তিনি সেই কাজ দক্ষ হাতে সম্পন্ন করেন। মোগল সম্রাট মোহম্মদ শাহ তাঁর কাজে খুশি হয়ে তাঁকে বুরহান-উল-মুলক উপাধি দেন।
এইভাবে ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে সাদাত খানের নেতৃত্বে অযোধ্যায় একটি স্বাধীন নবাবি গড়ে ওঠে। যদিও তিনি মোগল দরবারের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেননি; বরং আনুগত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে নবাবির সূচনা করেন।
No comments:
Post a Comment